বাংলার খাদ্য
বাংলার খাদ্য বলতে মূলত বোঝানো হচ্ছে ভারত ও বাংলাদেশে অবস্থানরত বাঙালির খাওয়ার তালিকায় থাকা খাদ্যসামগ্রীকে। এছাড়াও এতালিকায় স্থান করে নিতে পারে বহির্বিশ্বে থাকা বাঙালির নানান স্বাদের খাদ্যও। উল্লেখ্য যে, বাঙালি জাতিকে ভোজনরসিক বলা হয়ে থাকে এবং তাদের খাদ্যের রূপ, রস, গন্ধ, স্বাদ সবই আলাদা ঢঙে এশীয় স্বাদের মধ্যেও স্বকীয়তার ঘোষণা দেয়।বাংলার খাদ্যতালিকায় যেমন রয়েছে বাঙালির স্বকীয় খাদ্যাবলী, তেমনি বিভিন্ন দেশ ও জাতির থেকে গ্রহণ করা খাদ্য কিংবা তার অনুষঙ্গ, যেগুলো আজও বাঙালির খাদ্যে আচরিত, সেসব খাদ্যও স্থান পাবে এই তালিকায়।
প্রধান খাদ্য
বাঙালির প্রধান খাদ্য হচ্ছে ভাত। অর্থাৎ চাল থেকে প্রস্তুতকৃত ভাত ও ভাতজাতীয় খাদ্য বাঙালির খাদ্যতালিকায় মৌলিক চাহিদার স্থান দখল করেছে বলা যায়। চালকে সিদ্ধ করে তৈরি করা ভাত বাঙালি দৈনিক দুই কি তিনবেলা খেয়ে থাকে।সাধারণ খাদ্য
শুঁটকি
চ্যাপা
চ্যাপা হলো পুটিঁ মাছের শুটকি। বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলে যেসকল মাছের শুটকি করা হয় তার মধ্যে পুঁটি মাছ অন্যতম। পুঁটি মাছ ধরার পর ভুড়ি ফেলে দিয়ে মাছের তেল দিয়ে মাছ মেখে একটু রোদে শুকিয়ে মটকায় ভরে বায়ুরোধী করে মাটিতে পুঁতে রেখে ৪/৫ মাস পর মাটির নিচ থেকে উঠিয়ে ঢাকনা খুলে স্তরে স্তরে সাজানো পুটিমাছ বের করে বাজারে বিক্রি করা হয়। ঝাল কাঁচা মরিচ বেশি দিয়ে রসুন-পেঁয়াজসহ ভালোভাবে হাত দিয়ে মিহি করে সাবধানে মেখে গরম ও নরম আঠালো ভাত দিয়ে খাওয়া হয়। চ্যাপা শুটকির রান্না তীব্র গন্ধপ্রদ। এই শুঁটকি বিভিন্ন অঞ্চলে চাপা শুঁটকি নামেও পরিচিত।খাদ্য অনুষঙ্গ
চটকদার খাদ্য
বাঙালি সমাজে এমন অনেক খাদ্য প্রচলিত আছে, যেগুলো পুষ্টিগুণ বিবেচনায় ঠিক গ্রহণযোগ্য মাত্রার নয়, কিন্তু তবুও খাদ্য হিসেবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে বেশ আদৃত। এসকল খাদ্যকে একত্রে চটকদার খাদ্যের তালিকায় একত্রিত করা যায়:চানাচুর
মূল নিবন্ধ: চানাচুর
চানাচুর একপ্রকার ভাজা ঝাল খাবার। মুলত এটি ছোলার বা অড়হড় ডালের মিহি গুড়া থেকে তৈরি হয়। কখনও কখনও চানাচুর ঘি
দিয়েও ভাজা হয়ে থাকে। এর সাথে যোগ করা হয় বিভিন্ন প্রকারের মশলা।
দক্ষিণ এশীয়দের কাছে অসম্ভব জনপ্রিয় একটি নাস্তা। যেকোনো আড্ডা চানাচুর
ছাড়া যেন চিন্তাও করা যায় না। চানাচুর বাঙালি সমাজে এতোটাই আদৃত যে,
অধুনা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে বাণিজ্যিকভাবে চানাচুর উৎপাদন ও বিক্রয় করে
থাকে এমনকি বহির্বিশ্বের বাঙালি সমাজে চানাচুর রপ্তানিও করা হয়।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]মুড়ির মোয়া
মুড়ি এবং গুড়কে একসাথে জ্বাল দিয়ে গোল পাকিয়ে মোয়া নামক এজাতীয় মিষ্টি তৈরি করা হয়। তবে কখনও কখনও খই বা মুড়কি দিয়েও মোয়া তৈরি হয়। ভারতের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের জয়নগরের খইয়ের মোয়া খুবই বিখ্যাত।ঘুঘনী
ঘুঘনী একটি বিশেষ ধরনের ছোলা ভুনা। তবে এতে একটু বেশি গরম মশলা এবং সুগন্ধী চাল মেশানো হয়।নাড়ু
নাড়ু সাধারণত নারকেল এবং গুড় একত্রে জ্বাল দিয়ে গোল পাকিয়ে তৈরি করা হয়। এছাড়াও অন্য কিছু দিয়েও গোল পাকিয়ে কোন মিষ্টি তৈরি করলে তাকে নাড়ু বলে। যেমন তিলের নাড়ু। প্রত্যেক বাঙালি বাড়িতেই নাড়ু তৈরি হয়।মোরব্বা
মোরব্বা হলো খুব ঘন চিনির রসে ডোবানো একপ্রকার মিষ্টান্ন যা সাধারণত কোনো সবজিকে বিশেষভাবে জারিত করে প্রস্তুত হয়। যেমন: পেঁপের মোরব্বা, কুমড়োর মোরব্বা, পটলের মোরব্বা, শতমূলীর মোরব্বা ইত্যাদি।আঞ্চলিক খাদ্য
অঞ্চলভেদে স্থানভিত্তিক কিছু কিছু খাদ্য বাঙালির কাছে পরিচিত এবং তা ঐ অঞ্চলের ঐতিহ্যেরও একটা অংশ। এরকম কিছু খাদ্যের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি নিম্নে তুলে ধরা হলো:সিদল ভর্তা
সিদল বা বাংগালি বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের, বিশেষ করে গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, নিলফামারী, লালমনিরহাট ও রংপুর অঞ্চলে বিশেষ পছন্দনীয় খাবার। বর্ষা মৌসুমে টাকিমাছ ও কচু ঢেঁকি বা সামগাইন দ্বারা একত্রে মিশিয়ে মুঠা বা চাকার মতো করে তৈরি করা হয় বাংগালি, তারপর তা শুকিয়ে তাওয়ায় ভেজে তেল, মরিচ, আদা, রসুন, এবং পেঁয়াজ একত্রে পিষে খাওয়া হয়।জনপ্রিয় মাধ্যমে উপস্থাপনা
বাঙালির খাদ্যপ্রীতির উপস্থিতি রয়েছে বাঙালির গণমাধ্যমগুলোতেও। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের এবং বাংলাদেশের বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলে বাংলার খাদ্য বিষয়ে আলাদা অনুষ্ঠান না হলেও রান্না বিষয়ক অনুষ্ঠানগুলোর প্রায় সিংহভাগ জুড়ে থাকে বাংলার বিভিন্ন খাদ্য। ২০১০ খ্রিস্টাব্দে ভারতের স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেল স্টার প্লাস-এ শুরু হওয়া মাস্টার শেফ ইন্ডিয়া অনুষ্ঠানেও বাংলার বিভিন্ন খাদ্য তৈরিকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে উপস্থাপন করা হয়। এছাড়াও ডিসকভারি নেটওয়ার্ক-এর স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেল ট্র্যাভেল এ্যান্ড লিভিং-এর ভারতীয় চ্যানেলে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে উপস্থাপন করা হয় বাংলার বিভিন্ন খাদ্যকে।পান্তা ভাত
![]()
পান্তা-ইলিশ -- ইলিশ মাছের সাথে পান্তা ভাত ও শুঁটকি মাছ, আঁচার, ডাল, কাঁচা মরিচ, এবং পিয়াঁজ কুঁচির সংমিশ্রণের এই খাদ্যটি পহেলা বৈশাখ এর উৎসবের জনপ্রিয় খাদ্য।
|
|
উৎপত্তি | |
---|---|
উৎপত্তিস্থল | বাংলাদেশ ভারত(পশ্চিম বঙ্গ) |
অঞ্চল | গ্রামীণ মানুষ |
খাবারের বিস্তারিত | |
প্রকার | সকালের নাশতা |
প্রধান উপকরণ | ভাত, পানি |
ভিন্নতা | পাখাল, Poitabhat |
বাংলাদেশের সংস্কৃতি |
---|
বিষয় সম্পর্কিত ধারাবাহিক |
![]() |
বিংশ শতাব্দীর শেষ পাদে শহুরে বাঙালী বাংলা নববর্ষকে ঘটা করে উদযাপন শুরু করে। এই দিন বাঙালিয়ানার প্রতীক হিসেবে ভাজা ইলিশ মাছ সহযোগে পান্তা ভাত খাওয়া রেওয়াজে পরিণত হয়। একুশ শতাব্দীর প্রথম দশকে নববর্ষের সকালে ইলিশ মাছ সহযোগে পান্তা ভাত বাঙালি সংস্কৃতির অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়। প্রতি বছর পহেলা বৈশাখে পান্তা উৎসবের মাধ্যমে অনেকেই নতুন বছরকে বরণ করে নেয়ার সংস্কৃতি চালু ও পরিব্যাপ্ত হয়েছে।
নির্দিষ্ট পরিমাণ ভাতকে পানিতে প্রায় এক রাত ডুবিয়ে রাখলেই তা পান্তায় পরিণত হয়। ভাত মূলত পুরোটাই শর্করা (Carbohydrate)। ভাতে পানি দিয়ে রাখলে বিভিন্ন গাজনকারি (Fermentation) ব্যাক্টেরিয়া (Bacteria) বা ইস্ট (Yeast) শর্করা ভেঙ্গে ইথানল ও ল্যাকটিক এসিড তৈরি করে। এই ইথানলই পান্তাভাতের ভিন্ন রকম স্বাদের জন্য দায়ী।
মূলত পান্তা ভাত রাতভোর ভাত সংরক্ষণের একটি পদ্ধতি। ভাত বেশিক্ষণ রেখে দিলে তা পচে খাবার অনুপযোগী হয়ে পড়ে। কিন্তু পানি দিয়ে রাখলে গাজনকারি ব্যাক্টেরিয়া সেখানে ল্যাকটিক এসিড তৈরি করে যার ফলে পান্তা ভাতের অম্লত্ব বেড়ে যায় (pH কমে)। তখন পচনকারি ও অনান্য ক্ষতিকারক ব্যাক্টেরিয়া, ছত্রাক ভাত নষ্ট করতে পারে না।
মিষ্টি
মিষ্টি হলো চিনির বা গুড়ের রসে ভেজানো ময়দার গোলা কিংবা দুধ- চিনি মিশিয়ে তৈরি বিভিন্ন আকৃতির ছানার/ময়দার টুকরো করা খাবার। বাঙ্গালির খাওয়া-দাওয়ায় মিষ্টি একটি অতি জনপ্রিয় উপকরণ। বাঙ্গালির কোন উপলক্ষ-অনুষ্ঠানই মিষ্টি ছাড়া পূর্ণতা পায় না। মিষ্টির নাম শুনলেই জিভে জল আসে। বাংলাদেশে মিষ্টিকে পণ্য করে গড়ে ঊঠেছে অগণিত নামী-দামী মিষ্টি-বিক্রয়কেন্দ্র। সেই আদিযুগের লাড্ডু থেকে শুরু করে সন্দেশ, কালোজাম পেরিয়ে আজ মিষ্টির প্রকারভেদ শিল্পের পর্যায়ে চলে গেছে। বিভিন্ন রকমের মিষ্টি স্বাদ, আকারে এমনকি নামকরণে ভিন্নতা নিয়ে জনপ্রিয়।মিষ্টির প্রকারভেদ
বাংলার মিষ্টিকে দু'ভাগে ভাগ করেছেন সুকুমার সেন। প্রথম ভাগে আছে একক উপাদানে তৈরি মিষ্টি। এ ধরণের মিষ্টিতে গুড় বা চিনির সাথে আর কিছু মিশ্রিত থাকে না। যেমনঃ গুড় বা চিনির নাড়ু ও চাকতি, পাটালি, বাতাসা, খাজা, ছাঁচ ইত্যাদি। দ্বিতীয় ধরণের মিষ্টিকে আরো দু' রকমে ভাগ করা চলে। গুড় বা চিনির সাথে দুগ্ধজাত কোন উপকরণ ছাড়া অন্য দ্রব্য সহযোগে তৈরিকৃত মিষ্টান্ন। যেমনঃ নারকেল, তিল এসবের নাড়ু, চিঁড়া, মুড়ি, খৈ-এর মোয়া ইত্যাদি। দুগ্ধজাত দ্রব্যযোগে তৈরি নানান ধরণের মিষ্টি রসিক ও মিষ্টিপ্রিয় বাঙ্গালির সুপরিচিত। চিনির সাথে ছানার সংযোগে তৈরি হয় সন্দেশ ও মন্ডা। আবার এই ছানা রসে মাখিয়ে তৈরি হয় রসগোল্লা, দুধে ডোবালে রসমালাই। বেসনের ছোট ছোট দানা ঘিয়ে ভেজে তৈরি হয় বুন্দিয়া, যা দেখতে ছোট বিন্দুর মতো। কড়া পাকে প্রস্তুতকৃত বুন্দিয়াই মতিচুর, লাড্ডুর কাঁচামাল।[১]কয়েকপ্রকারের মিষ্টি
ইতিহাস
ভারতবর্ষের সবচেয়ে প্রাচীন মিষ্টি মতিচূরের লাড্ডু। বয়স প্রায় দুই হাজার বছরেরও বেশি। আধুনিক সন্দেশ-রসগোল্লার বয়স মাত্র দুই-আড়াই'শ বছর। বাঙালিরা ছানা তৈরি করতে শীখেছে পর্তুগিজদের থেকে। তাদের কাছ থেকে বাঙালি ময়রারা ছানা ও পনির তৈরির কৌশল শেখে। ভাস্কো দা গামা কালিকট বন্দরে এসেছিলেন ১৪৯৮ সালে, ভারত ত্যাগ করেন ১৫০৩ সালে। উপমহাদেশে ছানা তৈরির শিক্ষাবিস্তার অনেক পরের ঘটনা।প্রথম দিকে ছানা ও ছানার মিষ্টি একরকম পরিত্যাজ্যই ছিল ধর্মীয় কারনে। বৈদিক যুগে দুধ ও দুধ থেকে তৈরি ঘি, দধি, মাখন ইত্যাদি ছিল দেবখাদ্য। বিশেষ করে ননি ও মাখন অত্যন্ত প্রিয় ছিল শ্রীকৃষ্ণের। এ জন্য দুধ থেকে রূপান্তরিত ওই সব খাদ্য শ্রেষ্ঠ বলে বিবেচিত হতো। কিন্তু ছানা তৈরি হয় দুধ বিকৃত করে, এ জন্য মনুর বিধানমতে, ছানা ছিল অখাদ্য।
এ সম্পর্কে সুকুমার সেন তাঁর কলিকাতার কাহিনী বইয়ে লিখেছেন, "ক্ষীর-মাখন-ঘি-দই—এগুলো কাঁচা দুধের স্বাভাবিক পরিণাম, কৃত্রিম অথবা স্বাভাবিক। কিন্তু কোনোটিই দুধের বিকৃতি নয়। ‘ছানা’ কিন্তু ফোটানো দুধের কৃত্রিম বিকৃতি। বাঙালি অন্য দ্রব্য সংযোগ করে দুধ ছিন্নভিন্ন করে দিয়েছে, যাতে সারবস্তু ও জলীয় অংশ পৃথক হয়ে যায়। এভাবে দুধ ছিন্নভিন্ন করা হয় বলেই এর নাম হয়েছিল বাংলায় ‘ছেনা’, এখন বলা হয় ‘ছানা’। সংস্কৃত ভাষায় ছানার কোনো রকম উল্লেখ নেই। অন্য ভাষাতেও ছিল না। আগে অজ্ঞাত ছিল বলেই শাস্ত্রসম্মত দেবপূজায় ছানা দেওয়ার বিধান নেই।"
সন্দেশ ছানা আবিষ্কারের আগে ছিল। আগের দিনে সন্দেশ তৈরি করা হতো বেসন, নারকেল ও মুগের ডালের সঙ্গে চিনির সংযোগে। এ ছাড়া শুধু চিনি দিয়ে তৈরি এক ধরনের চাকতিকেও অনেক সময় সন্দেশ বলা হতো। নীহাররঞ্জন রায় তাঁর বাঙালীর ইতিহাস বইয়ে বাঙালির মিষ্টিজাতীয় যে খাদ্যের বিবরণ দিয়েছেন, তাতে সংগত কারণেই ছানার কোনো মিষ্টির উল্লেখ নেই। দুধ থেকে তৈরি মিষ্টির মধ্যে আছে দই, পায়েস ও ক্ষীরের কথা। সন্দেশের উল্লেখ আছে, তবে সেই সন্দেশ ছানার নয়। তিনি বলেছেন, ‘কোজাগর পূর্ণিমা রাত্রে আত্মীয়-বান্ধবদের চিপিটক বা চিঁড়া এবং নারিকেলের প্রস্তুত নানা প্রকারের সন্দেশ পরিতৃপ্ত করিতে হইত এবং সমস্ত রাত বিনিদ্র কাটিত পাশা খেলায়।’
চিনির সঙ্গে ছানার রসায়নে আধুনিক সন্দেশ ও রসগোল্লার উদ্ভাবন অষ্টাদশ শতকের শেষভাগে। এই আধুনিক সন্দেশ রসগোল্লার আবিষ্কর্তা হুগলির হালুইকররা। পরে তারা কলকতায় এসে বহু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে একে জগদ্বিখ্যাত করে তোলেন। প্রথম দিকে ছানার সন্দেশকে বলা হতো ‘ফিকে সন্দেশ’। কারণ, এ সন্দেশে আগের দিনের সন্দেশের চেয়ে মিষ্টি কম। শাস্ত্রসম্মত নয় বলে ছানার সন্দেশ অনেকে খেতে চাইত না। কলকাতার ময়রাদের সৃষ্টিতে মুগ্ধ শংকর তাঁর বাঙালির খাওয়া দাওয়া বইয়ে কড়াপাক, নরমপাক, কাঁচাগোল্লা, চন্দন সন্দেশসহ হাজার রকম সন্দেশের কথা উল্লেখ করে বলেছেন, ‘এঁরা আমেরিকান বিজ্ঞানীদের মতো পাইকিরি হারে মিষ্টি শাস্ত্রে নোবেল জয়ী হওয়ার যোগ্যতা রাখেন।’ তিনি জানিয়েছেন, সন্দেশ এত বৈচিত্র্যময় যে শীতকালের সন্দেশ আর গ্রীষ্মের সন্দেশে তো পার্থক্য আছেই, এমনকি সেপ্টেম্বর আর অক্টোবরের সন্দেশও নাকি এক রকম নয়।
রসগোল্লার নাম আদিতে ছিল গোপাল গোল্লা। রসের রসিক বাঙালি চিনির সিরায় ডোবানো বিশুদ্ধ ছানার গোল্লাকে নাম দিয়েছে রসগোল্লা। পরে ছানা ও চিনির রসায়নে নানা আকৃতি ও স্বাদে নানা নামে মিষ্টির সম্ভার হয়ে উঠেছে বৈচিত্র্যময়। এর মধ্যে আছে লেডিকেনি, চমচম, পানিতোয়া, কালোজাম, আমৃতি, রসমালাই—হরেক রকম। রসগোল্লার মতোই গোলাকার লাল রঙের লেডিকেনি নামে মিষ্টিটি তৈরি হয়েছিল ভারতের প্রথম গভর্নর জেনারেল লর্ড ক্যানিংয়ের স্ত্রীর সম্মানে। লোকমুখে এর চলতি নাম লেডিকেনি। আর রসগোল্লার সর্বশেষ নিরীক্ষাধর্মী সংস্করণ হলো স্পঞ্জ রসগোল্লা। এর উদ্ভাবক কলকাতার বাগবাজারের নবীন ময়রা। এটি এখন উভয় বাংলায় বেশ জনপ্রিয়। ছানার মিষ্টি এপার-ওপার উভয় বাংলায় বিপুল জনপ্রিয় হলেও বঙ্গের বাইরে, বিশেষত ভারতের অন্যত্র এখনো ছানার মিষ্টি তেমন তৈরি হয় না। বহির্বঙ্গের মিষ্টি প্যাড়া, মেওয়ার শুকনো মিষ্টি। এ কারণেই দিল্লির মসনদ এখনো লাড্ডুর দখলে।
বাংলাদেশের দেশের বিখ্যাত মিষ্টি
বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিশেষ বিশেষ মিষ্টির ক্ষেত্রে বিশেষ পারদর্শিতা অর্জন করেছেন সেখানকার ময়রারা। তাঁদের নিষ্ঠা ও সৃজনশীলতায় ঐতিহ্যবাহী হয়ে উঠেছে সেসব মিষ্টি। এর মধ্যে আছে,- টাঙ্গাইলের পোড়াবাড়ির চমচম,
- নাটোরের কাঁচাগোল্লা,
- কুমিল্লার রসমালাই,
- বিক্রমপুর ও কলাপাড়ার রসগোল্লা,
- বগুড়া (মূলত শেরপুর) ও গৌরনদীর দই,
- যশোরের খেজুরগুড়ের সন্দেশ,
- শাহজাদপুরের রাঘবসাই,
- মুক্তাগাছার মণ্ডা,
- খুলনা ও মুন্সিগঞ্জের আমৃতি
- কিশোরগঞ্জ-নেত্রকোনার বালিশ মিষ্টি
- নওগাঁর প্যারা সন্দেশ]]
- ময়মনসিংহের আমিরতি
- যশোরের জামতলার মিষ্টি
- যশোরের খেজুরের নোলন গুড়ের প্যারা সন্দেশ
- যশোরের খেজুর রসের ভিজা পিঠা
- মাদারীপুরের রসগোল্লাতো
- রাজশাহীর তিলের খাজা
- সিরাজদিখানের পাতক্ষীরা
- রাজবাড়ির শংকরের ক্ষীরের চমচম
- নওগাঁর রসমালাই
- পাবনার প্যারাডাইসের প্যারা সন্দেশ
- পাবনার শ্যামলের দই
- সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের পানিতোয়া
- কুষ্টিয়ায় মহিষের দুধের দই।
- মেহেরপুরের সাবিত্রী নামে একটা মিষ্টান্ন
- কুষ্টিয়ার তিলের খাজা
- ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ছানামুখি!
- মানিকপুর-- চকরিয়ার মহিষের দই
- ইকবালের সন্দেশ(দেওয়ান বাজার)
- বোম্বাইয়াওয়ালার ক্ষীর(এনায়েত বাজার)
- মহাস্থানের কটকটি
- গাইবান্ধার রসমঞ্জুরি
- কুষ্টিয়ার স্পেশাল চমচম
- ঢাকার বংগবন্ধু আভিনিউ এর পূর্ণিমার জিলাপী
- গুলশান এর সমরখন্দ এর রেশমী জিলাপী
- মহেশখালীর মোষের দই
- রাজশাহীর রসকদম
- চাপাই নবাব গঞ্জের শিবগঞ্জের চমচম
- শিবগঞ্জের (চাঁপাই নবাবগঞ্জ) চমচম, প্যারা সন্দেশ।
- কিশোরগঞ্জের তালরসের পিঠা ( চিনির শিরায় ভেজানো)
মিষ্টি নির্মাতা, মিষ্টির দোকান
মিষ্টি নির্মাণ একটি বিশেষ কলা। যারা মিষ্টি তৈরী করে তাদের বলা হয় ময়রা।এলাকাভিত্তিক মিষ্টির প্রসিদ্ধি ছাড়াও ব্যক্তিগতভাবেও অনেক মিষ্টিশিল্পী খ্যাতিমান হয়েছেন বিশেষ কোনো মিষ্টি তৈরির জন্য। এ ছাড়া ঢাকার পুরোনো খ্যাতিমান মিষ্টির দোকানের মধ্যে আছে,
- আলাউদ্দিন সুইটস ও
- মরণ চাঁদ।
- বনফুল,
- মুসলিম সুইটস,
- রস
- আম্বালাসহ
- মানিক মিষ্টান্ন ভান্ডার, জামালপুর।
মিষ্টি খেতে বারণ
ডায়াবেটিস রোগীদেরকে মিষ্টিজাতীয় খাবার খেতে ডাক্তাররা মানা করে থাকেন। তবে, এ ধরণের রোগীদের যখন গ্লুকোজের মাত্রা খুব কমে যায় তখন মিষ্টি কিংবা মিষ্টিজাতীয় খাবার অল্প পরিমাণে দেয়া যেতে পারে।ছবি ঘর
-
ছানা
মোয়া
মুড়ি এবং গুড়কে একসাথে জ্বাল দিয়ে গোল পাকিয়ে যে মিষ্টি তৈরি করা হয় তাকে মোয়া বলে । তবে কখনও কখনও খই বা মুড়কি দিয়েও মোয়া তৈরি হয় । পশ্চিমবঙ্গের জয়নগরের খইয়ের মোয়া খুবই বিখ্যাত । জয়নগরের আসল মোয়া কনকচূড় ধানের খই আর নলেন গুড় দিয়ে তৈরি হয় । জয়নগরের মোয়া নামে বিখ্যাত হলেও এটির উৎপত্তি জয়নগর থানার অন্তর্গত বহড়ু গ্রামে ।
ডালপুরি
ডালপুরি
ডালপুরিউৎপত্তি উৎপত্তিস্থল ভারত[১] অঞ্চল দক্ষিণ এশিয়া খাবারের বিস্তারিত প্রধান উপকরণ আটা
ডালপুরি
ডালপুরি
ডালপুরিউৎপত্তি উৎপত্তিস্থল ভারত[১] অঞ্চল দক্ষিণ এশিয়া খাবারের বিস্তারিত প্রধান উপকরণ আটা
দই বড়া
দই বড়া পুরোনো নবাবী আমলের একটি খাবার। এটি মসলা মেশানো টক দই দিয়ে মাষ কলাই -এর বড়া রান্না। এটি বেশ তীব্র স্বাদ যুক্ত খাবার। এটি সাধারণত রুচিবর্ধক খাবার হিসাবে ব্যবহার করা হয়।
বাংলাদেশে পুরানো ঢাকাতে এখনো এর প্রচলন আছে। যদিও বর্তমানে এর ব্যাবহার সীমিত। তবে রোজার মাসে ইফতারীর জন্য এর ব্যবহার লক্ষ্য করার মতো।
উত্তর ভারতে, বিশেষত পঞ্জাবি, হরিয়াণি ইত্যাদি রন্ধন প্রণালীতে, দই বড়া বহুল ব্যবহৃত।
আলুর চিপস
আলুর চিপস
আলুর চিপসউৎপত্তি উৎপত্তিস্থল সারাটোগা স্প্রিংস, নিউ ইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র
খাবারের বিস্তারিত প্রকার নাস্তা, পার্শ্ব পরিবেশনা পরিবেশন তাপমাত্রা কক্ষ তাপমাত্রা
সাদামাটা ধরনের মূল আলুর চিপস আলুর সাথে লবণ মিশিয়ে তৈরি করা হয়। তবে বিভিন্ন রকমের উপাদান ব্যবহার ও পদ্ধতি প্রয়োগের মাধ্যমে এটির বিভিন্ন প্রকরণ তৈরি হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, পনির, মাংস, মাছ, মশলা, চকোলেট, টমেটো ইত্যাদি বহু স্বাদযুক্ত করে আলুর চিপস তৈরি করা যেতে পারে। নামে আলুর চিপস হলেও যুক্তরাজ্য ও আয়ারল্যান্ডে অনেক ক্ষেত্রে আলুর পাশাপাশি, ভুট্টা, যব, ও টাপিওকা সহযোগেও এ ধরনের চিপস তৈরি করা হয়।[১]
Comments
Post a Comment