বাংলাদেশী রন্ধনপ্রণালী


 



খিচুড়ি


খিচুড়ি
Khichdi01.JPG
খিচুড়ি
উৎপত্তি
উৎপত্তিস্থল ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ
অঞ্চল পশ্চিমবঙ্গ, গুজরাট, পাঞ্জাব
খাবারের বিস্তারিত
প্রধান উপকরণ চাল, বিভিন্ন রকম ডাল, হলুদ গুড়া, মরিচ গুড়া, ধনিয়া গুড়া, আলু, সবজি, মাংস, মুরগি, পেয়াজ।
ভিন্নতা ভুনা খিচুড়ি, নরম খিচুড়ি, সবজি খিচুড়ি
খিচুড়ি মূলত ডাল-চাল এর সমন্বয়ে তৈরি করা খাদ্য। ভুনা খিচুড়ি রান্না করার আগে ডাল-চালের মিশ্রণকে ভালভাবে ধুয়ে তেলে পিঁয়াজকুচি, লবণ ও মসলার সাথে ভেজে নিতে হয়। এরপরে পরিমাণমত পানি দিয়ে বসা ভাত-এর মতো রান্না করতে হয়। অনেকে না-ভেজে পানিতে চাল, ডাল, তেল, লবণ, মসলা একসাথে দিয়ে খিচুড়ি বসিয়ে দেন। খিচুড়িতে চাল-ডালের সাথে সব্জী-সেদ্ধ সহ রান্না করলে হয়ে যায় সব্জী খিচুড়ি। খিচুড়ি বাঙালিদের মাঝে অতি জনপ্রিয় খাদ্য।

পিঠা


বাংলাদেশের ভাপা পিঠা
পিঠা একটি মুখরোচক উপাদেয় খাদ্যদ্রব্য। এটি চালের গুড়া, আটা, ময়দা, অথবা অন্য কোনও শষ্যজাত গুড়া দিয়ে তৈরি করা হয়। এলাকা অনুযায়ী ভিন্ন ভিন্ন এবং আলাদা রকম পিঠা তৈরি হয়ে থাকে। গ্রামাঞ্চলে সাধারণতঃ নতুন ধান উঠার পর থেকেই পিঠা তৈরির আয়োজন করা হয়। শীতের সময় পিঠার বাহারি উপস্থাপন ও আধিক্য দেখা যায়। মিষ্টি, ঝাল, টক বা অন্য যে কোনও স্বাদ হতে পারে।

পিঠার প্রকারভেদ

  • ভাঁপা পিঠা
  • ভেজিটেবল ঝাল পিঠা
  • ছাঁচ পিঠা
  • ছিটকা পিঠা
  • চিতই পিঠা
  • চুটকি পিঠা
  • চাপড়ি পিঠা
  • চাঁদ পাকন পিঠা
  • ছিট পিঠা
  • সুন্দরী পাকন
  • সরভাজা
  • পুলি পিঠা
  • পাতা পিঠা
  • পাটিসাপটা
  • পাকান পিঠা
  • পানতোয়া
  • পুডিং
  • মালপোয়া
  • মেরা পিঠা
  • মালাই পিঠা
  • মুঠি পিঠা
  • আন্দশা
  • কুলশি
  • কাটা পিঠা
  • কলা পিঠা
  • খেজুরের পিঠা
  • ক্ষীর কুলি
  • গোকুল পিঠা
  • গোলাপ ফুল পিঠা
  • লবঙ্গ লতিকা
  • রসফুল পিঠা
  • জামদানি পিঠা
  • হাঁড়ি পিঠা
  • ঝালপোয়া পিঠা
  • ঝুরি পিঠা
  • ঝিনুক পিঠা
  • সূর্যমুখী পিঠা
  • নকশি পিঠা
  • নারকেল পিঠা
  • নারকেলের ভাজা পুলি
  • নারকেলের সেদ্ধ পুলি
  • নারকেল জেলাফি
  • তেজপাতা পিঠা
  • তেলের পিঠা
  • তেলপোয়া পিঠা
  • দুধরাজ
  • ফুল ঝুরি পিঠা
  • ফুল পিঠা
  • বিবিয়ানা পিঠা
  • সেমাই পিঠা
  • চিড়ার মোয়া
  • কাউনের মোয়া
  • ঝাল মোয়া
  • ফিরনি
  • সেমাই
  • নারকেল নাড়ু
তন্মধ্যে, বিবিয়ানা পিঠাকে জামাই ভুলানো পিঠা নামেও অভিহিত করা হয়। অপূর্ব কারুকার্যখচিত এ পিঠা তৈরীতে বিবি (অর্থ - কনে)-কে অনেকরকম পারদর্শিতা কিংবা পারঙ্গমতার পরিচয় দিতে হয় বলেই এরূপ নামকরণ হয়েছে বলে ধারণা করা হয়।[১]

প্রেক্ষাপট


বাসায় বানানো পুলি পিঠা
বাঙালীর লোক ইতিহাস-ঐতিহ্যে পিঠা-পুলির গুরুত্ব ভূমিকা পালন করে আসছে বহুকাল ধরে। এটি লোকজ ও নান্দনিক সংস্কৃতিরই বহিঃপ্রকাশ। সাধারণতঃ পিঠা শীতকালের রসনাজাতীয় খাবার হিসেবে অত্যন্ত পরিচিত। মুখরোচক খাদ্য হিসেবে বাঙালী সমাজে বিশেষ আদরণীয়। এছাড়াও, আত্মীয়-স্বজন ও মানুষে-মানুষের পারস্পরিক সম্পর্কের বন্ধনকে আরো দৃঢ় ও মজবুত করে তুলতে পিঠা-পুলি আয়োজনের উৎসব সবিশেষ ভূমিকা পালন করে।[২]

পিঠাঘর

শুধুমাত্র শীতেই নয়, সারাবছর পিঠা খাবার সুযোগ রয়েছে। শহুরে ব্যস্ত জীবনে পিঠা তৈরী করা বেশ কষ্টসাধ্য ব্যাপার। তাই, বেশ কিছু জায়গায় গড়ে উঠেছে পিঠাঘর। সেখানে পিঠা বিক্রী করা হয়। সাধারণতঃ অধিকাংশ পিঠাই সংখ্যা বা পিস হিসেবে বিক্রী হয়। এছাড়াও, খাবার ব্যবস্থাও রয়েছে খাদ্যরশিকদের জন্য। পাশাপাশি গায়ে-হলুদ, জন্মদিন, বিয়ে-শাদীসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে পিঠা সরবরাহেরও ব্যবস্থা করে থাকে পিঠাঘরগুলো।[৩]

সাংস্কৃতিক অঙ্গনে

পিঠার স্বাদ গ্রহণ ও জনসমক্ষে একে আরো পরিচিত করে তুলতে দিনব্যাপী অথবা সপ্তাহব্যাপী শহর-নগরে পিঠা উৎসবের আয়োজন করা হয়। ঢাকায় সাংবাৎসরিকভাবে বাংলাদেশ শিশু একাডেমী, বাংলাদেশ মহিলা সমিতি, আমরা ঢাকাবাসী প্রমূখ সংস্থা-সংগঠনের উদ্যোগে এ উৎসব উদযাপিত হয়ে থাকে।
সেজন্যেই পিঠাকে ঘিরে পল্লী মায়ের কোল কবিতায় বাংলাদেশের বিখ্যাত কবি বেগম সুফিয়া কামাল লিখেছেন,
পৌষ পার্বণে পিঠা খেতে বসি খুশীতে বিষম খেয়ে
আরও উল্লাস বাড়িয়াছে মনে মায়ের বকুনি পেয়ে।
এছাড়াও, মাটির গান হিসেবে ব্যাপক পরিচিতি রয়েছে ভাওয়াইয়া গানের। সেখানেও পিঠে বা পিঠার প্রভাব পড়েছে।[২] তেমনি একটি হলোঃ-
মনটাই মোর পিঠা খাবার চাই

তথ্যসূত্র

  1. দৈনিক ইত্তেফাক, মুদ্রিত সংস্করণ, সম্পাদকীয়, শীতকালে পিঠা-পুলির উৎসব, ১৭ ডিসেম্বর, ২০১১ইং, পৃষ্ঠা-৮
  2. দৈনিক ইত্তেফাক, মুদ্রিত সংস্করণ, পৌষ এলো গো পৌষ, নগর সংস্কৃতি, ৭ জানুয়ারী, ২০১২ইং, পৃষ্ঠা-২৪
  3. কালের কণ্ঠ, এ টু জেড, এই শীতে পিঠাঘরে, মুদ্রিত সংস্করণ, পৃষ্ঠা-১৫, ৯ জানুয়ারী, ২০১২ইং

রসগোল্লা

রসগোল্লা
Rasagolla.JPG
ভুবনেশ্বরের রসগোল্লা
উৎপত্তি
অন্যান্য নাম ক্ষীরমোহন,
উৎপত্তিস্থল ভারত
অঞ্চল ওড়িশা, পশ্চিমবঙ্গ, বাংলাদেশ
খাবারের বিস্তারিত
প্রধান উপকরণ ছানা, সুজি, চিনি
ভিন্নতা কলকাতা সাদা রসগোল্লা

রসগোল্লা
রসগোল্লা সাদা রঙের এক প্রকার ছানার মিষ্টি।

স্পঞ্জ রসগোল্লা

স্পঞ্জ রসগোল্লা, রসগোল্লা সদৃশ রসে ডোবা রসালো মিষ্টি। যা স্পঞ্জের মতো নরম। রসগোল্লা খেতে ভালো|

কিছুকথা

মিষ্টি হল বাঙালি জীবনের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। বাঙালিদের যেকোন অনুষ্ঠান মিষ্টি ছাড়া অপূর্ণ থেকে যায়।
এর মধ্যে রসগোল্লার স্থান সবার উপরে।।

রসগোল্লা ইতিহাস

যতদূর জানা যায় ভারতের ওড়িশায় প্রথম রসগোল্লা প্রস্তুত করা হয়েছিল। রথযাত্রা উৎসবে এর ব্যবহারের কথা জানা যায়।
এর পর এই রসগোল্লা জনপ্রিয় হয়ে, পাশের রাজ্যগুলিতে ছড়িয়ে পড়ে। তবে কলকাতায় এটি উল্লেখযোগ্যভাবে জনপ্রিয়তা লাভ করে।

তথ্যসূত্র

http://www.bangalinet.com/rasgulla.html

সন্দেশ


কলকাতার সন্দেশ।
সন্দেশ দুধের ছানা দিয়ে তৈরি একধরণের উপাদেয় মিষ্টান্ন। ছানার সাথে চিনি বা গুড় মিশিয়ে ছাঁচে ফেলে সন্দেশ প্রস্তুত করা হয়ে থাকে। খাদ্য উপাদানের দিক থেকে এটি একটি পুষ্টিকর খাবার। বাঙালির উৎসব আয়োজনে এই নকশাদার উপাদেয় খাবারটির ব্যবহার অনেক প্রাচীন কাল থেকেই হয়ে আসছে। বিভিন্ন এলাকার মিষ্টি তৈরির কারিগরেরা এই সন্দেশ তৈরির ব্যাপারটাকে একটা শৈল্পিক ব্যাপারে পরিণত করে ফেলেছে। বাংলাদেশের নাটোর জেলার সন্দেশ (যা কাচাগোল্লা নামেই বিশেষভাবে পরিচিত) জনপ্রিয় একটি মিষ্টান্ন।

চটপটি

প্লেট ভর্তি চটপটি
চটপটি বাংলাদেশে জনপ্রিয় একটি নাশতা জাতীয় খাদ্য। তরুন প্রজন্মের কাছে খুবই পছন্দের খাবার। বিশেষ করে শহরাঞ্চলে এর ব্যপক প্রচলন দেখা যায়। এটি গৃহে প্রস্তুতির পরিবর্তে দোকান থেকেই সাধারণত কিনে খাওয়া হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে রাস্তার পাশে, পার্কে-উদ্যানে, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশদ্বারে, বা অনুরূপ জনসমাগম স্থলে অস্থায়ী দোকানে এটি তৈরি ও বিক্রয় করা হয়। তবে আজকাল কোন কোন রেস্তরাঁতে চটপটি পরিবেশন করতে দেখা যায়।

প্রস্তুত প্রণালী

ঢাকার রাস্তায় ভ্রাম্যমাণ চটপটি বিক্রেতার দোকান
চটপটি উপদান কাবুলি মটর ডাল, আলু, ডিম, ধনে পাতা, ও পিঁয়াজ এবং মশলা হিসাবে ব্যবহার করা হয় মরিচ, জিরা, ধনিয়া ও গোল মরিচ। আর অবশ্যই ব্যবহার করা হয় লবণ। এটি তৈরি করার জন্য প্রথমে কাবুলি মটর ডাল এর এবং আলু সিদ্ধ করে বেশ পাতলা মিশ্রণ তৈরি করা হয়। এরপর কাঁচা পিয়াজ, মরিচ, ডিম সিদ্ধ কুচি, জিরা এবং ধনিয়া গুরা, ধনিয়া পাতা কুচি এবং গোল মরিচ, লবণ মেশানো হয়। সব শেষে ফুচকা গুঁড়ো করে বা ভেঙ্গে ছড়িয়ে দেয়া হয়। চটপটি সাধারণত বিভিন্ন মশলা এবং চিনি বা গুড় মেশানো তেঁতুলগোলা পানির সাথে পরিবেশিত হয়।

চানাচুর

চানাচুর
Bombaymix.jpg
চানাচুর
উৎপত্তি
উৎপত্তিস্থল ভারত
অঞ্চল মুম্বই, ভারত
খাবারের বিস্তারিত
প্রধান উপকরণ ভাজা মসুর ডাল
চানাচুর একপ্রকার ভাজা নাশতা জাতীয় হালকা খাবার। এর অন্য নাম ডালমুট। মুলত এটি ছোলার বা অড়হড় ডালের মিহি গুঁড়া থেকে তৈরি হয়। তবে এতে প্রায়শ চিনাবাদাম, চিঁড়া, সবুজাভ ভাজা মটরশুটিঁ ইত্যাদি যোগ করা হয়। বিশেষ করে ভাজা বাদাম চানাচুরের অপরিহার্য উপকরণ। শুকনা, মুচমুচে, স্বাদে ঝাল। দক্ষিণ এশীয়দের কাছে জনপ্রিয় একটি নাস্তা। ঘরোয়া আড্ডা, নদীর তীর বা উদ্যানে ভ্রমণ চানাচুর চর্বনে প্রাণময় হয়ে ওঠে। গ্রামে-গঞ্জে, হাটে-বাজারে খেটে-খাওয়া মানুষের কাছে স্বল্পমূল্যের চানাচুর সাময়িক ক্ষুধা নিবৃত্তিতে কার্যকর। এটি রুচিকর। মরিচের গুঁড়া ও লবণের কারণে এটি নিজেই ঝাল, তবু প্রায়শ: পরিবেশনের আগে পেঁয়াজ কুচি, কাচা মরিচ, সরষের তেল প্রভৃতি, কখনো আদা কুচি বা ধনে পাতা, দিয়ে মাখিয়ে একে আরো সুস্বাদু করা হয়। এছাড়া মুড়ি দিয়ে মাখিযেও চানাচুর পরিবেশন করা হয়। চানাচুর সাধারণত ঘরে ঘরে তৈরী করা হয় না। চানাচুর তৈরী ও বিক্রি করে হাজার হাজার বেকার মানুষ জীবিকা নির্বাহ করে। মানুষ ১৯৯০-এর দশক থেকে বাংলাদেশে বড় আকারের কারখানায় চানাচুর উৎপন্ন করা এবং তা প্যাকেটজাত করা শুরু হয়। ভারতে মিষ্টি স্বাদের চানাচুর প্রস্তুত করা হয় ; কখনো কখনো এতে কিসমিস যোগ করা হয়।



Comments